দারিদ্র্যেরে অন্ধকারে ১০০ কোটি ভারতীয়!

- আপডেট : ৯ মার্চ ২০২৫, রবিবার
- / 8
ভারতে ধনীদের সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও বিপুল সংখ্যক মানুষ আজও চরম দারিদ্র্যেরে মধ্যে বসবাস করছে। শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিদের সংখ্যা ও শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৮৫,৬৯৮-এ পৌঁছেছে। সংখ্যাটি ২০২৮ সালের মধ্যে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কেন্দ্র সরকার যতই দাবি করুক বিপুল সংখ্যক মানুষকে দারিদ্রসীমার নীচ থেকে তুলে আনা হয়েছে, তা মানতে রাজি নন অর্থনীতিবিদরা। পুরোটাই নাকি সংখ্যাতত্ত্বের কারিকুরি। অর্থনীতির সমীক্ষা সংস্থা ইন্দাসভ্যালির রিপোর্ট বলছে, একদিকে ধনীদের সংখ্যা বাড়লেও, অন্যদিকে ১০০ কোটিরও বেশি ভারতীয় সাব-সাহারান আফ্রিকার দারিদ্র্যেরে সমতুল্য জীবনে দিন কাটাচ্ছে। একদিকে দেশে বিলিয়নিয়রদের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে, অন্যদিকে ১০০ কোটির বেশি ভারতীয় দিন কাটাচ্ছে সাব-সাহারান আফ্রিকার মতো দারিদ্র্যে।একদল ক্রমশ বিলাসিতার শিখরে উঠছে, অন্যদল খাদ্য, স্বাস্থ্য ও মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ‘নাইট ফ্র্যাঙ্ক ওয়েলথ রিপোর্ট ২০২৫’ অনুযায়ী, ভারতে ২০২৪ সালে ৮৫,৬৯৮ জনের সম্পদ ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি, যা ২০২৮ সালের মধ্যে ৯৩,৭৫৩-এ পৌঁছনোর সম্ভাবনা। দেশে বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যাও বেড়েছে। ২০২৪ সালে নতুন ২৬ জন যোগ দিয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯১-এ। কিন্তু এই পরিসংখ্যানের উলটোদিকেই রয়েছে এক চরম বাস্তবতা, যেখানে ভারতের ১০০ কোটির বেশি মানুষ বেঁচে আছেন চরম দারিদ্র্যেরে মধ্যেই। ভারতের জনসংখ্যাকে তিনভাবে বিভক্ত করে দেখা যাচ্ছে শীর্ষ ১০ শতাংশ অর্থনৈতিকভাবে মেক্সিকোর সমতুল্য, মধ্যস্তর ইন্দোনেশিয়ার মতো, আর বৃহত্তর অংশ অর্থনৈতিকভাবে সাব-সাহারান অঞ্চলের সমতুল্য। এই চরম বৈষম্যের মধ্যে দেশের সার্বিক উন্নতি ও সামাজিক নিরাপত্তার প্রশ্ন আরও গভীর হচ্ছে। ২০২৪ সালে ভারতে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ২৬২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে যেখানে মাত্র ৭ জন বিলিয়নিয়ার ছিলেন, সেখানে এখন দাঁড়িয়েছে ১৯১-এ। আর এই ১৯১ জনের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ৯৫০ বিলিয়ন ডলার, যা ভারতকে বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের দিক থেকে চতুর্থস্থানে তুলে এনেছে। যার অর্থ হচ্ছে ভারত যে এই চতুর্থ স্থানে এল, তাতে গোটা দেশের ১৯১ জনের সম্পদের বৃদ্ধির কারণেই এল। দেশের মানুষের সম্পদ নিজেদের পকেটস্থ করেই তাঁদের এই সম্পদ বৃদ্ধি। যার মানে দাঁড়াচ্ছে, এই চতুর্থ স্থানে উঠে আসায় দেশের প্রায় সব মানুষের ক্ষতি ছাড়া লাভ কিছু হযনি। আর এই বিষয়টিকেই দেশের অর্থনৈতিক সাফল্য বলে ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করছে কেন্দ্র সরকার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এত বিপুল সম্পদ কীভাবে কেন্দ্রীভূত হল মাত্র ১০ শতাংশ মানুষের হাতে? আর কেন বাকি ৯০ শতাংশ মানুষ চরম বৈষম্যের শিকার? আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, দেশের বেশিরভাগ মানুষ যে তালিকায় আছেন, সেই তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের আর্থিক পরিকাঠামোয় ভারতের স্থান হচ্ছে ১৪০তম স্থানে। যা একেবারেই নিম্নস্তরের দেশগুলির সঙ্গে তুলনীয়। অর্থাৎ ভারতে একটি দেশের মধ্যেই একইসঙ্গে দুটি বিপরীত বাস্তবতার প্রতিচিত্র দেখা যাচ্ছে। যেখানে একদিকে কর্পোরেট জগতে ধনীদের জৌলুস, অন্যদিকে কোটি কোটি মানুষের ক্ষুধার জ্বালা। এই বৈষম্যের মাঝে টেকসই উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব? অর্থনীতি যদি কেবল ধনীদেরই সমৃদ্ধ করে তা হলে বাকি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতের ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে পৌঁছবে? সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, ভারত আজ বৈষম্যের চূড়ান্ত এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে। উন্নয়নের ফল যদি জনসাধারণের বৃহৎ অংশের নিকট না পৌঁছয় তাহলে তা কেবল কয়েকজনের বিলাসবহুল জীবন তৈরি করবে, সাধারণ মানুষের নয়। বর্তমান ভারতে বেকারত্ব এক রেকর্ড সংখ্যায় পৌঁছেছে। চাকরি হারিয়ে নতুন করে বেকার হয়েছে আরও লক্ষ লক্ষ মানুষ। পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই দেশে। সরকারি দফতরগুলিতে লক্ষ লক্ষ শূন্যপদে নতুন করে নিয়োগ হচ্ছে না। গ্রামীণ কর্মসংস্থানের জন্য ১০০ দিনের কাজেও পর্যান্ত কাজ মিলছে না। সেখানে বাজেট বরাদ্দ এমনভাবে কাটছাট হয়েছে, তাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পারিশ্রমিকও পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে দেশের সামগ্রিক কাজের বাজার খবুই খারাপ অবস্থায়। অতএব দেশের অর্থনীতির চাকা কীভাবে ঘুরবে?