বেতনভিত্তিক চাকরির জায়গা দখল করছে এআই, আগামীতে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বলে আর কিছুই থাকবে না!

- আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
- / 137
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: ভারতের অর্থনীতিতে বহুকাল ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। অর্থনীতির পরিভাষায় বলা হয়ে থাকে, আর্থ ও সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে ধনী ও দরিদ্রের মাঝে অবস্থিত শ্রেণিকেই বলা হয়ে থাকে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। দেশের একটা বড় অংশ এই মধ্যবিত্ত শ্রেণিভুক্ত। শুধুমাত্র এই মধ্যবিত্ত শ্রেণিদের জন্যই রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাজেটে বিশেষ নজর দেয় সরকার। বাজেটে মধ্যবিত্তরা কী পেল তা নিয়ে চলে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মনে করা হয়ে থাকে, এই মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে খুশি রাখতে পারলেই ভোটের বাজারে কেল্লাফতে। সেই মধ্যবিত্ত শ্রেণিই এবার দেশ থেকে মুছে যেতে চলেছে? দেশের অর্থনীতি কি সে দিকেই যাচ্ছে? যেভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমতা (এআই) বাজার দখল করছে তাতে এই আশঙ্কাই তৈরি হয়েছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণিদের বেশিরভাগই বেতনভুক্ত কর্মচারি। সরকারি কর্মচারি, গ্রুপ ডি কর্মী থেকে শুরু করে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের মধ্যবিত্ত শ্রেণি হিসেবে ধরা হয়। অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, যেভাবে অনলাইন কেনাকাটা বাড়ছে, শপিং মলের সংখ্যা বাড়ছে তাতে এই ধরনের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের সংকটে পড়তে হচ্ছে। আর এআই চলে আসায় বেতনভিত্তিক চাকরি বাজার সংকুচিত হয়ে পড়ছে।
আরও পড়ুন: পূজা খেদকরকে ২ মে দিল্লি পুলিশের সামনে হাজিরার নির্দেশ শীর্ষ আদালতের
পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস ফার্ম ‘মার্সেলাস ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজার’-এর প্রতিষ্ঠাতা তথা অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ সৌরভ মুখোপাধ্যায় মনে করেন, ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণির অস্তিত্ব এবার হয়তো শেষ হতে চলেছে। সৌরভের মতে, ভারত এখন এক নতুন অর্থনৈতিক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। যেখানে বেতনভোগী কর্মসংস্থান ক্রমশ মৃত্যুর সম্মুখীন হবে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এই দশকে বেতনভোগী কর্মসংস্থানের মৃত্যু হতে চলেছে। শিক্ষিত ও পরিশ্রমী লোকেদের জন্য এতদিন একটি সার্থক উপার্জনের উপায় ছিল বেতনযুক্ত চাকরি। সেই বেতনকেন্দ্রিক কর্মসংস্থানের বাজার ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ছে।’ তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এতদিন আমাদের বাপ-ঠাকুরদারা বিভিন্ন পেশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম করে গিয়েছেন মাসিক বেতনের বিনিময়ে। সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে তাঁরা চাকরি করে গিয়েছেন একই সংস্থা ও অফিসে ২৫-৩০ বছর ধরে। তাঁদের এতদিন ধরে করে আসা চিরাচরিত সেই চাকরির ‘মডেল’ এখন পুরনো হয়ে গিয়েছে। মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য যেসব চাকরি ছিল সেগুলোই এবার উঠে যেতে বসেছে। ফলে ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে গড়ে তোলার কাজটি তাই এখন আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। এইসব মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অফিসে বসে কাজ করে যাচ্ছে তাদের চাকরির বাজার দখল করে নিচ্ছে অটোমেশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সৌরভের কথায়, ‘সাদা কলারের জামা পরা এই মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবীরা এতদিন যা করে গিয়েছেন তার সবটাই এখন করে দিচ্ছে এআই। গুগল বলেছে যে, এর এক-তৃতীয়াংশ কোডিং ইতিমধ্যেই এআই দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে। ভারতীয় আইটি, মিডিয়া এবং ফিনান্সের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে এআই আসছে। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির কারণে মধ্যবিত্ত স্তরের চাকরি বাজার ব্যাপকভাবে ক্ষয়ের সম্মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।’ তাঁর পরামর্শ, এখন আমার-আপনার এবং আমাদের মতো পরিবারগুলিকে অবশ্যই বাচ্চাদের চাকরিপ্রার্থী হওয়ার জন্য প্রস্তুত করা বন্ধ করতে হবে। কারণ, চাকরি সেখানে থাকবে না। মধ্যবিত্ত চাকরি বলে আর কিছু থাকবে না। মধ্যবিত্ত শ্রেণি বলেই আর কিছু থাকবে না। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, সেদিন আর খুব দূরে নেই যেখানে সমাজে থাকবে শুধু ধনী ও গরিব। আর মাঝখান থেকে মুছে যাবে এতিদিনের দীর্ঘ প্রসারিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি, যারা এতদিন ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক ছিল।