২৭ মার্চ ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সস্তার ট্যাবলেট আটকে দেবে ক্যানসারের বিস্তার!

সুস্মিতা
  • আপডেট : ৭ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার
  • / 22

নয়াদিল্লি: সাধারণত জ্বর, মাথাব্যথার ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট বহুল ব্যবহৃত হয়। অথচ, এই জ্বর, মাথাব্যথা উপশমের সাধারণ ট্যাবলেটই ক্যানসারের মতো মারণ রোগের বিস্তার রোধ করার ক্ষমতা রাখে। আক্রান্ত স্থান থেকে অন্যান্য অঙ্গে ক্যানসারের বিস্তারের বিরুদ্ধে ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করতে পারে এই ওষুধ। এক গবেষণা রিপোর্টে এমনই দাবি করা হয়েছে, যা নিয়ে বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক মহলে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত ইঁদুরের উপর এই ওষুধ দারুণ কাজ করেছে। বিভিন্ন ক্যানসারে আক্রান্ত ইঁদুরের উপর ওষুধটি যে দুর্দান্ত কাজ দিয়েছে তা অনেক অজানাকে জানতে সাহায্য করবে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানসার ইমিউনোলজিস্ট রাহুল রায়চৌধুরির নেতৃত্বে একটি গবেষণা টিম মেটাস্টেসিসের (ক্যানসার আক্রান্ত প্রথম কোষ থেকে তা অন্যান্য কোষে ছড়িয়ে পড়া) বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশেষত ইমিউনোসপ্রেসিভ (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাধা দেয়)-কে টার্গেট করতে একটি অভিনব পথ খুঁজে পেয়েছেন এই অ্যাসপিরিনের মাধ্যমে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯০ শতাংশ ক্যানসারের মৃত্যুর জন্য দায়ী এই মেটাস্টেসিস। তাঁদের গবেষণায় স্তন, কোলন ও ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত ইঁদুরদের নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেখানে দেখা গিয়েছে, যেসব ইঁদুরকে অ্যাসপিরিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে তাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গ যেমন ফুসফুস বা লিভারে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার হার অ্যাসপিরিন ছাড়া চিকিৎসা করা ইঁদুরদের তুলনায় অনেক কম। নেচার জার্নালে এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, অ্যাসপিরিনের অ্যান্টি-মেটাস্ট্যার্টিক কার্যকলাপ অভিনব চিকিৎসা পথ তৈরি করতে পারে। রায়চৌধুরি ও তাঁর সহকর্মী গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, অ্যাসপিরিনের একটি প্রধান অ্যান্টি-প্লেটলেট অ্যাকশন যা থ্রোমবক্সেন এ২ নামক একটি অণুর উৎপাদন কমায়, মেটাস্ট্যাটিক ক্যানসার কোষগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইমিউন সিস্টেমের কোষগুলির ক্ষমতা বাড়ায়।
মেটাস্ট্যাসিস প্রতিরোধে অ্যাসপিরিনকে একটি সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে মূল্যায়ন করার জন্য ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে। ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলির মধ্যে একটি হল এডিডি-অ্যাসপিরিন যেটি ভারত, আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০ হাজার রোগীকে নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে যাদের প্রাথমিক পর্যায়ের স্তন, কোলোরেক্টাল, গ্যাস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল এবং প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়েছে। ভারতের অংশগ্রহণকারী ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল কেন্দ্র হচ্ছে মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল সেন্টার হাসপাতাল। মানবদেহের উপর এই ট্রায়ালগুলির ফলাফল আগামী দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বেরিয়ে আসবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন রাহুল রায়চৌধুরি। তবে তিনি অবশ্য এটাও সতর্ক করে দিয়েছেন যে,অ্যাসপিরিনের দাম কম এবং সহজলভ্য হলেও এটি মোটেই ঝুঁকিমুক্ত ওষুধ নয়। দীর্ঘমেয়াদি অ্যাসপিরিন ব্যবহারে পেপটিক আলসার, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তপাতের মতো গুরুতর পরিস্থিতি হতে পারে। রায়চৌধুরির কথায়, ‘আমাদের গবেষণা এই পরামর্শ দেয় যে, অ্যাসপিরিন সম্ভাব্য প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য সবচেয়ে উপকারী হতে পারে। তবে এটা সুপারিশ (অ্যাসপিরিনের জন্য) করার আগে আরও ক্লিনিকাল বৈধতা প্রয়োজন। ক্যানসার ইমিউনোলজিস্ট অ্যালান মেলচার জানান, এই নতুন গবেষণাটি ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে আরও ভালো, আরও লক্ষ্যযুক্ত ওষুধ তৈরিতে সাহায্য করতে পারে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

সস্তার ট্যাবলেট আটকে দেবে ক্যানসারের বিস্তার!

আপডেট : ৭ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার

নয়াদিল্লি: সাধারণত জ্বর, মাথাব্যথার ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট বহুল ব্যবহৃত হয়। অথচ, এই জ্বর, মাথাব্যথা উপশমের সাধারণ ট্যাবলেটই ক্যানসারের মতো মারণ রোগের বিস্তার রোধ করার ক্ষমতা রাখে। আক্রান্ত স্থান থেকে অন্যান্য অঙ্গে ক্যানসারের বিস্তারের বিরুদ্ধে ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করতে পারে এই ওষুধ। এক গবেষণা রিপোর্টে এমনই দাবি করা হয়েছে, যা নিয়ে বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক মহলে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত ইঁদুরের উপর এই ওষুধ দারুণ কাজ করেছে। বিভিন্ন ক্যানসারে আক্রান্ত ইঁদুরের উপর ওষুধটি যে দুর্দান্ত কাজ দিয়েছে তা অনেক অজানাকে জানতে সাহায্য করবে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানসার ইমিউনোলজিস্ট রাহুল রায়চৌধুরির নেতৃত্বে একটি গবেষণা টিম মেটাস্টেসিসের (ক্যানসার আক্রান্ত প্রথম কোষ থেকে তা অন্যান্য কোষে ছড়িয়ে পড়া) বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশেষত ইমিউনোসপ্রেসিভ (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাধা দেয়)-কে টার্গেট করতে একটি অভিনব পথ খুঁজে পেয়েছেন এই অ্যাসপিরিনের মাধ্যমে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯০ শতাংশ ক্যানসারের মৃত্যুর জন্য দায়ী এই মেটাস্টেসিস। তাঁদের গবেষণায় স্তন, কোলন ও ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত ইঁদুরদের নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেখানে দেখা গিয়েছে, যেসব ইঁদুরকে অ্যাসপিরিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে তাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গ যেমন ফুসফুস বা লিভারে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার হার অ্যাসপিরিন ছাড়া চিকিৎসা করা ইঁদুরদের তুলনায় অনেক কম। নেচার জার্নালে এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, অ্যাসপিরিনের অ্যান্টি-মেটাস্ট্যার্টিক কার্যকলাপ অভিনব চিকিৎসা পথ তৈরি করতে পারে। রায়চৌধুরি ও তাঁর সহকর্মী গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, অ্যাসপিরিনের একটি প্রধান অ্যান্টি-প্লেটলেট অ্যাকশন যা থ্রোমবক্সেন এ২ নামক একটি অণুর উৎপাদন কমায়, মেটাস্ট্যাটিক ক্যানসার কোষগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইমিউন সিস্টেমের কোষগুলির ক্ষমতা বাড়ায়।
মেটাস্ট্যাসিস প্রতিরোধে অ্যাসপিরিনকে একটি সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে মূল্যায়ন করার জন্য ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে। ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলির মধ্যে একটি হল এডিডি-অ্যাসপিরিন যেটি ভারত, আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০ হাজার রোগীকে নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে যাদের প্রাথমিক পর্যায়ের স্তন, কোলোরেক্টাল, গ্যাস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল এবং প্রোস্টেট ক্যানসার ধরা পড়েছে। ভারতের অংশগ্রহণকারী ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল কেন্দ্র হচ্ছে মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল সেন্টার হাসপাতাল। মানবদেহের উপর এই ট্রায়ালগুলির ফলাফল আগামী দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বেরিয়ে আসবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন রাহুল রায়চৌধুরি। তবে তিনি অবশ্য এটাও সতর্ক করে দিয়েছেন যে,অ্যাসপিরিনের দাম কম এবং সহজলভ্য হলেও এটি মোটেই ঝুঁকিমুক্ত ওষুধ নয়। দীর্ঘমেয়াদি অ্যাসপিরিন ব্যবহারে পেপটিক আলসার, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তপাতের মতো গুরুতর পরিস্থিতি হতে পারে। রায়চৌধুরির কথায়, ‘আমাদের গবেষণা এই পরামর্শ দেয় যে, অ্যাসপিরিন সম্ভাব্য প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য সবচেয়ে উপকারী হতে পারে। তবে এটা সুপারিশ (অ্যাসপিরিনের জন্য) করার আগে আরও ক্লিনিকাল বৈধতা প্রয়োজন। ক্যানসার ইমিউনোলজিস্ট অ্যালান মেলচার জানান, এই নতুন গবেষণাটি ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে আরও ভালো, আরও লক্ষ্যযুক্ত ওষুধ তৈরিতে সাহায্য করতে পারে।