০৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিশু- নারী-বৃদ্ধের হত্যার ক্ষেত্রেও পাশ্চাত্যের আনন্দ- বিদ্বেষ 

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৩, শনিবার
  • / 55

আহমদ হাসান ইমরান:  পাশ্চাত্যের খ্রিস্টান রাষ্ট্রগুলি কতটা মুসলিম বিরোধী, কতটা ইসলাম বিরোধী, আর মুসলিমদের তারা কতটা ঘৃণা করে তা এবার কার হামাস গ্রুপ এবং ইসরাইলের মধ্যে সংঘাতে উঠে এসেছে।

আগেই আমরা লিখেছি, কীভাবে ফিলিস্তিন ভূখণ্ড থেকে মুসলিম আরবদের শত শত বছর ধরে সেখানে বাস করা মুসলিম আরবদের কোনও কারণ ছাড়াই ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং ইহুদি জিওনিস্টরা সন্ত্রাসী এবং দখলদার ব্রিটিশদের সহায়তায় উৎখাত করেছে। অসহায় ফিলিস্তিনিরা বুঝতেই পারেনি, কেন তাদের স্বদেশ এবং স্বগৃহ ছাড়তে হচ্ছে।

হয়তো কোনও কোনও উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনি বলেছেন, সবই ব্রিটেন এবং ইহুদিদের মালুম। কেন এই লক্ষ লক্ষ লোককে নিজেদের ঘরবাড়ি, জায়গা জমিন থেকে উৎখাত করে ঘরহারা বানানো হল, তার লাগসই কোনও ব্যাখ্যা এখনও ব্রিটিশ ঘাতকরা দিতে পারেননি। তবে অনেকেই বলেন, ধনকুবের ইহুদিরা ব্রিটিশদের বিপুল অর্থ দিয়ে ফিলিস্তিনের ভূমি নিজেদের জন্য হাসিল করেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং তারও আগে ক্ষয়িষ্ণু ব্রিটিশ প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়েছিল। আর সেই অর্থ মেটায় ইহুদিরা। আর তারই জেরে বালফোর ডিকলারেশনে ব্রিটিশ সরকার ইহুদিদের ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ওয়াদা করে বসে। আগে ইহুদিদের যে প্রস্তাব উসমানীয় খিলাফতের সুলতান আবদুল হামিদ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। আর এভাবেই ষড়যন্ত্র করে খ্রিস্টান, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স ইহুদি রাষ্ট্র তৈরি করে। যা পরিণতি পায় ১৯৪৮ সালে।

তা পশ্চিমা খ্রিস্টানদের অপরাধবোধ কী ছিল?  অপরাধবোধটি হচ্ছে, জার্মানি ও পোল্যান্ডে খ্রিস্টান নাজিবাদীরা যাদের নায়ক ছিলেন হিটলার তারা অসংখ্য ইহুদিকে হত্যা করে। আর অনেকে বলে থাকেন, ইহুদিদের হত্যার যে সংখ্যাটি জায়নবাদীরা প্রচার করে আসল পরিসংখ্যান ছিল তার থেকে অনেক কম। এই ইহুদি হত্যার অপরাধবোধ দূর করার জন্য খ্রিস্টানরা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিদের এনে ফিলিস্তিনে জোরপূর্বক বসিয়ে ইসরাইল রাষ্ট্র তৈরি করে। অথচ ইহুদিদের সঙ্গে প্রায় ২ হাজার বছরের শত্রুতা ছিল খ্রিস্টানদেরই। মুসলিমরা কখনোই ইহুদিদের উপর অত্যাচার করেনি। বরং তাদের জেরুসালেমে ও ইস্তামবুলে সুরক্ষা দিয়েছে, দিয়েছে সম্মান।

যাইহোক, এখানে আলোচ্য হচ্ছে, হঠাৎ খ্রিস্টানরা তাদের ইহুদি বিদ্বেষ ছেড়ে এখন মুসলিমদের দিকে নজর দিয়েছে। তাদের ইসলামফোবিয়া এখন তুঙ্গে উঠেছে। হান্টিংটন ঠিকই বলেছেন, শীঘ্রই ‘সভ্যতার একটি সংঘাত’ শুরু হবে। যাতে খ্রিস্টান, ইহুদি ও কট্টর হিন্দুরা  একদিকে হবে। আর অন্যদিকে থাকবে ইসলামি সভ্যতা। চিন হয়তো বা ইসলামি সভ্যতাকে এই সংঘাতে সহায়তা করতে পারে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, হান্টিংটন কথিক সেই ‘ক্ল্যাস অফ সিভিলাইজেশন’ হয়তো বা শুরু হয়েছে।

পশ্চিমা মিডিয়া যে ইসলাম ও মুসলিমদের আজকের দিনেও কতটা ঘৃণা করে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেল দেখলেই বুঝতে পারা যায়। আমরা ইউএসএ টুডে-র এক প্রধান শিরোনাম ইতিমধ্যে পাঠকের কাছে তুলে ধরেছি। তাতে গাজায় মার্কিন মদদে ধ্বংসযজ্ঞ ও নরসংহারের ঘটনায় ইউএসএ টুডে-র কুৎসিত আনন্দ স্পষ্টভাবে সামনে এসেছে। শিরোনামটি ছিল, ‘ইসরাই: প্রতিশোধমূলক হামলা, তবে এ শুধু শুরু মাত্র’। অর্থাৎ মুসলিম অধ্যুষিত গাজাকে পৃথিবীর বুক থেকে সম্পূর্ণ বিলোপ করে দিতে হবে।

অথচ গত এক দশকে প্রত্যেক বছর ইসরাইলিরা আরও নতুন নতুন ইহুদি এনে পূর্ব জেরুসালেমে এবং পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, জমি দখল করে জোরপূর্বক বসতি স্থাপন করছে। এটা নাকি সেটলারদের অর্থাৎ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের অধিকার! আর সেখানে হাজার বছর ধরে বসবাস করা মুসলিমরা যেন মানুষই নয়। তাদের কোনও অধিকার নেই। প্রত্যেক বছর বিভিন্ন সময়ে ইহুদিরা কমপক্ষে ২৫০-৩০০ মুসলিমকে হত্যা করে চলেছে। আর গাজাকে তো বানিয়ে রেখেছে একটি অবরুদ্ধ উন্মুক্ত কারাগার।

কিন্তু এহ্ বাহ্য। নিউ ইয়র্ক পোস্টের ১২ অক্টোবরের প্রধান শিরোনাম হচ্ছে ‘ ‘স্কুলড অন হেট’।  হার্ভার্ডের কিছু ছাত্রছাত্রী ‘জাস্টিস ফর প্যালেস্টাইন’ ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল। আর যায় কোথায়! হার্ভার্ড নাকি ঘৃণা শেখানোর স্কুল।

হার্ভার্ডের সমস্ত ফান্ড বন্ধ করে দেওয়া উচিত। ওয়াল স্ট্রিট জানতে চায় তাদের নাম যারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছে। ওয়াল স্ট্রিট দেখবে, এদেরকে কেউ যেন চাকরি না দেয়। অর্থাৎ ইসরাইলের সপক্ষে ছাড়া কেউ কোনও বক্তব্য রাখতে পারবে না। তাদেরকে ইসরাইলের ভুয়ো বক্তব্য ও ভিডিয়োকেই সমর্থন দিয়ে যেতে হবে। এই হচ্ছে পশ্চিমাদের মতপ্রকাশে স্বাধীনতার আসল স্বরূপ।

ফ্রান্সে ও আরও বেশ কয়েকটি খ্রিস্টান রাষ্ট্রে গাজায় বোমা বর্ষণের বিরুদ্ধে কোনও রকম বিক্ষোভ প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর কেউ যদি ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করে তাকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবার বলছি, এই হচ্ছে এইসব পাশ্চাত্য দেশের ব্যক্তি অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা! যা নিজেদের জন্য নয়, কেবলমাত্র তাদের বিরোধীদের উপর প্রযোজ্য।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

শিশু- নারী-বৃদ্ধের হত্যার ক্ষেত্রেও পাশ্চাত্যের আনন্দ- বিদ্বেষ 

আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৩, শনিবার

আহমদ হাসান ইমরান:  পাশ্চাত্যের খ্রিস্টান রাষ্ট্রগুলি কতটা মুসলিম বিরোধী, কতটা ইসলাম বিরোধী, আর মুসলিমদের তারা কতটা ঘৃণা করে তা এবার কার হামাস গ্রুপ এবং ইসরাইলের মধ্যে সংঘাতে উঠে এসেছে।

আগেই আমরা লিখেছি, কীভাবে ফিলিস্তিন ভূখণ্ড থেকে মুসলিম আরবদের শত শত বছর ধরে সেখানে বাস করা মুসলিম আরবদের কোনও কারণ ছাড়াই ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং ইহুদি জিওনিস্টরা সন্ত্রাসী এবং দখলদার ব্রিটিশদের সহায়তায় উৎখাত করেছে। অসহায় ফিলিস্তিনিরা বুঝতেই পারেনি, কেন তাদের স্বদেশ এবং স্বগৃহ ছাড়তে হচ্ছে।

হয়তো কোনও কোনও উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনি বলেছেন, সবই ব্রিটেন এবং ইহুদিদের মালুম। কেন এই লক্ষ লক্ষ লোককে নিজেদের ঘরবাড়ি, জায়গা জমিন থেকে উৎখাত করে ঘরহারা বানানো হল, তার লাগসই কোনও ব্যাখ্যা এখনও ব্রিটিশ ঘাতকরা দিতে পারেননি। তবে অনেকেই বলেন, ধনকুবের ইহুদিরা ব্রিটিশদের বিপুল অর্থ দিয়ে ফিলিস্তিনের ভূমি নিজেদের জন্য হাসিল করেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং তারও আগে ক্ষয়িষ্ণু ব্রিটিশ প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়েছিল। আর সেই অর্থ মেটায় ইহুদিরা। আর তারই জেরে বালফোর ডিকলারেশনে ব্রিটিশ সরকার ইহুদিদের ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ওয়াদা করে বসে। আগে ইহুদিদের যে প্রস্তাব উসমানীয় খিলাফতের সুলতান আবদুল হামিদ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। আর এভাবেই ষড়যন্ত্র করে খ্রিস্টান, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স ইহুদি রাষ্ট্র তৈরি করে। যা পরিণতি পায় ১৯৪৮ সালে।

তা পশ্চিমা খ্রিস্টানদের অপরাধবোধ কী ছিল?  অপরাধবোধটি হচ্ছে, জার্মানি ও পোল্যান্ডে খ্রিস্টান নাজিবাদীরা যাদের নায়ক ছিলেন হিটলার তারা অসংখ্য ইহুদিকে হত্যা করে। আর অনেকে বলে থাকেন, ইহুদিদের হত্যার যে সংখ্যাটি জায়নবাদীরা প্রচার করে আসল পরিসংখ্যান ছিল তার থেকে অনেক কম। এই ইহুদি হত্যার অপরাধবোধ দূর করার জন্য খ্রিস্টানরা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিদের এনে ফিলিস্তিনে জোরপূর্বক বসিয়ে ইসরাইল রাষ্ট্র তৈরি করে। অথচ ইহুদিদের সঙ্গে প্রায় ২ হাজার বছরের শত্রুতা ছিল খ্রিস্টানদেরই। মুসলিমরা কখনোই ইহুদিদের উপর অত্যাচার করেনি। বরং তাদের জেরুসালেমে ও ইস্তামবুলে সুরক্ষা দিয়েছে, দিয়েছে সম্মান।

যাইহোক, এখানে আলোচ্য হচ্ছে, হঠাৎ খ্রিস্টানরা তাদের ইহুদি বিদ্বেষ ছেড়ে এখন মুসলিমদের দিকে নজর দিয়েছে। তাদের ইসলামফোবিয়া এখন তুঙ্গে উঠেছে। হান্টিংটন ঠিকই বলেছেন, শীঘ্রই ‘সভ্যতার একটি সংঘাত’ শুরু হবে। যাতে খ্রিস্টান, ইহুদি ও কট্টর হিন্দুরা  একদিকে হবে। আর অন্যদিকে থাকবে ইসলামি সভ্যতা। চিন হয়তো বা ইসলামি সভ্যতাকে এই সংঘাতে সহায়তা করতে পারে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, হান্টিংটন কথিক সেই ‘ক্ল্যাস অফ সিভিলাইজেশন’ হয়তো বা শুরু হয়েছে।

পশ্চিমা মিডিয়া যে ইসলাম ও মুসলিমদের আজকের দিনেও কতটা ঘৃণা করে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পত্র-পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেল দেখলেই বুঝতে পারা যায়। আমরা ইউএসএ টুডে-র এক প্রধান শিরোনাম ইতিমধ্যে পাঠকের কাছে তুলে ধরেছি। তাতে গাজায় মার্কিন মদদে ধ্বংসযজ্ঞ ও নরসংহারের ঘটনায় ইউএসএ টুডে-র কুৎসিত আনন্দ স্পষ্টভাবে সামনে এসেছে। শিরোনামটি ছিল, ‘ইসরাই: প্রতিশোধমূলক হামলা, তবে এ শুধু শুরু মাত্র’। অর্থাৎ মুসলিম অধ্যুষিত গাজাকে পৃথিবীর বুক থেকে সম্পূর্ণ বিলোপ করে দিতে হবে।

অথচ গত এক দশকে প্রত্যেক বছর ইসরাইলিরা আরও নতুন নতুন ইহুদি এনে পূর্ব জেরুসালেমে এবং পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, জমি দখল করে জোরপূর্বক বসতি স্থাপন করছে। এটা নাকি সেটলারদের অর্থাৎ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের অধিকার! আর সেখানে হাজার বছর ধরে বসবাস করা মুসলিমরা যেন মানুষই নয়। তাদের কোনও অধিকার নেই। প্রত্যেক বছর বিভিন্ন সময়ে ইহুদিরা কমপক্ষে ২৫০-৩০০ মুসলিমকে হত্যা করে চলেছে। আর গাজাকে তো বানিয়ে রেখেছে একটি অবরুদ্ধ উন্মুক্ত কারাগার।

কিন্তু এহ্ বাহ্য। নিউ ইয়র্ক পোস্টের ১২ অক্টোবরের প্রধান শিরোনাম হচ্ছে ‘ ‘স্কুলড অন হেট’।  হার্ভার্ডের কিছু ছাত্রছাত্রী ‘জাস্টিস ফর প্যালেস্টাইন’ ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল। আর যায় কোথায়! হার্ভার্ড নাকি ঘৃণা শেখানোর স্কুল।

হার্ভার্ডের সমস্ত ফান্ড বন্ধ করে দেওয়া উচিত। ওয়াল স্ট্রিট জানতে চায় তাদের নাম যারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছে। ওয়াল স্ট্রিট দেখবে, এদেরকে কেউ যেন চাকরি না দেয়। অর্থাৎ ইসরাইলের সপক্ষে ছাড়া কেউ কোনও বক্তব্য রাখতে পারবে না। তাদেরকে ইসরাইলের ভুয়ো বক্তব্য ও ভিডিয়োকেই সমর্থন দিয়ে যেতে হবে। এই হচ্ছে পশ্চিমাদের মতপ্রকাশে স্বাধীনতার আসল স্বরূপ।

ফ্রান্সে ও আরও বেশ কয়েকটি খ্রিস্টান রাষ্ট্রে গাজায় বোমা বর্ষণের বিরুদ্ধে কোনও রকম বিক্ষোভ প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর কেউ যদি ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করে তাকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবার বলছি, এই হচ্ছে এইসব পাশ্চাত্য দেশের ব্যক্তি অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা! যা নিজেদের জন্য নয়, কেবলমাত্র তাদের বিরোধীদের উপর প্রযোজ্য।