২০ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বল্প মূল্যে অত্যাধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে নজির গড়েছে ইসলামিয়া হাসপাতাল

আবুল খায়ের
  • আপডেট : ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 30

ইন্তেখাব আলম: রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ঢেলে সাজানোর জন্য একাধিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের সাধারণ রোগীরাও যেন সাধ্যের মধ্যেই হাতের নাগালে উন্নত মানের অত্যাধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা পান তাঁর জন্য সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যেমন সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চালু হয়েছে, তেমনি সরকারি হাসপাতালেও পিপিপি মডেলের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ডায়াগনস্টিক ইউনিট খোলা হয়েছে।
খুব সামান্য মূল্যেই সাধারণ মানুষকে উন্নতমানের চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে আসছে কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ইসলামিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ৭৩ নম্বর চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে নবনির্মিত ১০তলা ইসলামিয়া হাসপাতালের ইন্ডোর এবং আউটডোরে কার্ডিওলোজি, হেমাটোলজি, পেডিয়াট্রিক, প্লাস্টিক সার্জারি, মেডিসিন, আই, সার্জারি, ডার্মাটোলজি, ইউরোলজি, ইএনটি-র পাশাপাশি ক্লিনিক্যাল অঙ্কলোজির চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছে ইসলামিয়া হাসপাতাল। আডটডোর পরিষেবা ছাড়াও প্যাথোলজি বিভাগেও বিভিন্ন রোগ সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুব্যবস্থা রয়েছে ইসলামিয়া হাসপাতালে।
নব কলেবরে সজ্জিত ইসলামিয়া হাসপাতালের বহির্বিভাগ চালু হওয়ার পর থেকেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত সু পরামর্শ পাচ্ছেন আগত রোগীরা। বর্তমানে ইসলামিয়া হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা প্রসঙ্গে হাসপাতালের প্রশাসক ড. রুহিল আলম বলেন, ৭৩ চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত প্রায় শতাধী-প্রাচীন ইসলামিয়া হাসপাতালের নবনির্মিত ১০ তলা ভবনের বহির্বিভাগের উদ্বোধন করেছিলেন রাজ্যের পুর এবং নগরোন্নায়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। হাসপাতালের সভাপতি ফিরহাদ হাকিম, সাধারণ সম্পাদক আমিরুদ্দিন ববি-সহ হাসপাতাল পরিচালন সমিতির সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বর্তমানে বহির্বিভাগ-সহ অন্যান্য ইউনিটগুলিকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। যার ফলে এক ছাতার তলায় অত্যাধুনিক মানের চিকিৎসা পরিষেবা সহজেই পাচ্ছেন কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। বুধবার ড. রুহিল আলম আরও বলেন, সপ্তাহের সোমবার থেকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আউটডোর পরিষেবা পাচ্ছেন রোগীরা। অন্যদিকে, মাত্র ৫০ টাকায় ২৪ ঘণ্টা ইমারজেন্সি ওপিডি পরিষেবার পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টা ইমারজেন্সি ইন্ডোর পরিষেবা চালু রয়েছে। এ ছাড়াও রাজ্য সরকারের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পে চিকিৎসা ছাড়াও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জটিল অপারেশন করে রোগীকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দিচ্ছেন।
ইসলামিয়া হাসপাতালের বর্তমান পরিষেবা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে হাসপাতাল প্রশাসক ড. রুহিল আলম জানান, সম্প্রতি হৃদ্যন্ত্রের জটিল সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন কলকাতার বাসিন্দা তাহিরুন নেশা (৬৩)। হার্টের রোগের পাশাপাশি ওই রোগীর কিডনি এবং ফুসফুসের সমস্যা থাকায় কোনওভাবেই তাহিরুন নেশাকে অজ্ঞান করে ‘ওপেন হার্ট সার্জারি’ সম্ভব ছিল না। কিন্তু, বিশেষ মেডিক্যাল টিম গঠন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ওই রোগীর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। হৃদ্রোগ, ব্রেন স্ট্রোকের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও, প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগী আউটডোরে চিকিৎসা পরিষেবা পান বলেও জানান ড. রুহিল আলম।
উল্লেখ্য, রাজ্যের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা পরিকাঠামোকে ঢেলে সাজানোর জন্য গত এক দশকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য খাতে লগ্নি করা হয়েছে দেড় লক্ষ কোটি টাকা। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর রজ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা। এমবিবিএস পাঠক্রমে আসন সংখ্যা ১৩০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি। সর্বোপরি রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু হওয়ায় উপভোক্তারা যেমন ৫ লক্ষ টাকার সুবিধা পাচ্ছেন, তেমনি উপকৃত হয়েছেন রাজ্যের আড়াই কোটি পরিবার। সরকারি এবং বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কলকাতার ঐতিহ্যবাহী প্রায় শতাধী প্রাচীন ইসলামিয়া হাসপাতাল মানব সেবার সদিচ্ছা নিয়েই নিরলসভাবেই রোগীদের পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

স্বল্প মূল্যে অত্যাধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে নজির গড়েছে ইসলামিয়া হাসপাতাল

আপডেট : ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার

ইন্তেখাব আলম: রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ঢেলে সাজানোর জন্য একাধিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের সাধারণ রোগীরাও যেন সাধ্যের মধ্যেই হাতের নাগালে উন্নত মানের অত্যাধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা পান তাঁর জন্য সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যেমন সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চালু হয়েছে, তেমনি সরকারি হাসপাতালেও পিপিপি মডেলের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ডায়াগনস্টিক ইউনিট খোলা হয়েছে।
খুব সামান্য মূল্যেই সাধারণ মানুষকে উন্নতমানের চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে আসছে কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ইসলামিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ৭৩ নম্বর চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে নবনির্মিত ১০তলা ইসলামিয়া হাসপাতালের ইন্ডোর এবং আউটডোরে কার্ডিওলোজি, হেমাটোলজি, পেডিয়াট্রিক, প্লাস্টিক সার্জারি, মেডিসিন, আই, সার্জারি, ডার্মাটোলজি, ইউরোলজি, ইএনটি-র পাশাপাশি ক্লিনিক্যাল অঙ্কলোজির চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছে ইসলামিয়া হাসপাতাল। আডটডোর পরিষেবা ছাড়াও প্যাথোলজি বিভাগেও বিভিন্ন রোগ সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুব্যবস্থা রয়েছে ইসলামিয়া হাসপাতালে।
নব কলেবরে সজ্জিত ইসলামিয়া হাসপাতালের বহির্বিভাগ চালু হওয়ার পর থেকেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত সু পরামর্শ পাচ্ছেন আগত রোগীরা। বর্তমানে ইসলামিয়া হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা প্রসঙ্গে হাসপাতালের প্রশাসক ড. রুহিল আলম বলেন, ৭৩ চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত প্রায় শতাধী-প্রাচীন ইসলামিয়া হাসপাতালের নবনির্মিত ১০ তলা ভবনের বহির্বিভাগের উদ্বোধন করেছিলেন রাজ্যের পুর এবং নগরোন্নায়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। হাসপাতালের সভাপতি ফিরহাদ হাকিম, সাধারণ সম্পাদক আমিরুদ্দিন ববি-সহ হাসপাতাল পরিচালন সমিতির সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বর্তমানে বহির্বিভাগ-সহ অন্যান্য ইউনিটগুলিকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। যার ফলে এক ছাতার তলায় অত্যাধুনিক মানের চিকিৎসা পরিষেবা সহজেই পাচ্ছেন কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। বুধবার ড. রুহিল আলম আরও বলেন, সপ্তাহের সোমবার থেকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আউটডোর পরিষেবা পাচ্ছেন রোগীরা। অন্যদিকে, মাত্র ৫০ টাকায় ২৪ ঘণ্টা ইমারজেন্সি ওপিডি পরিষেবার পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টা ইমারজেন্সি ইন্ডোর পরিষেবা চালু রয়েছে। এ ছাড়াও রাজ্য সরকারের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পে চিকিৎসা ছাড়াও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জটিল অপারেশন করে রোগীকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দিচ্ছেন।
ইসলামিয়া হাসপাতালের বর্তমান পরিষেবা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে হাসপাতাল প্রশাসক ড. রুহিল আলম জানান, সম্প্রতি হৃদ্যন্ত্রের জটিল সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন কলকাতার বাসিন্দা তাহিরুন নেশা (৬৩)। হার্টের রোগের পাশাপাশি ওই রোগীর কিডনি এবং ফুসফুসের সমস্যা থাকায় কোনওভাবেই তাহিরুন নেশাকে অজ্ঞান করে ‘ওপেন হার্ট সার্জারি’ সম্ভব ছিল না। কিন্তু, বিশেষ মেডিক্যাল টিম গঠন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ওই রোগীর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। হৃদ্রোগ, ব্রেন স্ট্রোকের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও, প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন রোগী আউটডোরে চিকিৎসা পরিষেবা পান বলেও জানান ড. রুহিল আলম।
উল্লেখ্য, রাজ্যের স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা পরিকাঠামোকে ঢেলে সাজানোর জন্য গত এক দশকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য খাতে লগ্নি করা হয়েছে দেড় লক্ষ কোটি টাকা। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর রজ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা। এমবিবিএস পাঠক্রমে আসন সংখ্যা ১৩০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি। সর্বোপরি রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প চালু হওয়ায় উপভোক্তারা যেমন ৫ লক্ষ টাকার সুবিধা পাচ্ছেন, তেমনি উপকৃত হয়েছেন রাজ্যের আড়াই কোটি পরিবার। সরকারি এবং বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি কলকাতার ঐতিহ্যবাহী প্রায় শতাধী প্রাচীন ইসলামিয়া হাসপাতাল মানব সেবার সদিচ্ছা নিয়েই নিরলসভাবেই রোগীদের পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছে।