শুধু বিতাড়ন নয়, ধর্ষণের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে, চরমে আতঙ্ক কাশ্মীরি ছাত্রীরা

- আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, রবিবার
- / 95
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর মর্মান্তিক জঙ্গি হামলার পর কট্টরবাদী হিন্দুত্ব গোষ্ঠী হিংসা ও বিদ্বেষের ঝড় তুলে দিতে চাইছে সারা দেশে। পাকিস্তানের মুণ্ডুপাত করার পর কাশ্মীরিদের উপর টার্গেট করা হয়েছে সারা জেশ জুড়ে। বিশেষ করে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রী ও ব্যবসায়ীদের উপর নির্যাতন চলছে। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজনৈতিক মহল। এমনকী কাশ্মীরি পণ্ডিতরাও এই নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। এ পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সব ভিডিয়ো দেখা গিয়েছে তাতে নির্যাতন ও অত্যাচারের ছবি বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেবে। যেসব অঞ্চলের ভিডিয়ো দেখা যায়নি সেখানকার অবস্থা নিয়েও ভয়াবহ ধারণা যে কেউ করতে পারে। পুলিশের সামনেই কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের উপর নির্মমভাবে মারধর করা হচ্ছে এমন দৃশ্য ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা দেশবাসীর কাছে সংযমের আবেদন জানিয়েছেন। আতঙ্কিত কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীরা এয়ারপোর্টে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে দ্রুত ফ্লাইট ধরার জন্য। কট্টরবাদীরা সোশ্যাল মিডিয়াকে হিংসার বিষ ছড়াতে গিয়ে বিদ্বেষের মাত্রা চরমে নিয়ে যেতে চাইছে। কাশ্মীরি কন্যাদের ধরে এনে গণধর্ষণের নিদান দিয়েছে কেউ কেউ। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের পোস্ট ছড়িয়ে পড়ার পরও সরকার কোনও পদক্ষেপ নিয়ে কাশ্মীরবাসীদের আশ্বস্ত করতে পেরেছে বলে এ পর্যন্ত কোনও খবর নেই। ফলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি।
আরও পড়ুন: মুম্বইয়ের ইডি দফতরে আগুন, বহু নথি নষ্টের আশঙ্কা, ঘটনাস্থলে ১২টি ইঞ্জিন
কাশ্মীরি কন্যাদের রাতে আমার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকুন। এইভাবে পোস্ট করার পর আবার লেখা হয়েছে, হিজাবি মহিলারা আমার সম্পত্তি, কাশ্মীর বিরোধিতাকে চরমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এইসব মারাত্মক অপরাধমূলক ও আপত্তিকর মন্তব্যর মাধ্যমে। একদিকে শুধু কাশ্মীরি হওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কর্তৃপক্ষ কাশ্মীরে ফিরে যাওয়ার নিদান দিয়েছে সুরক্ষার পরিবর্তে। আর অপরদিকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ায় আতঙ্ক আরও বহুগণ বেড়ে গিয়েছে এখনও পর্যন্ত ফ্লাইট ধরতে না পারা কাশ্মীরি ছাত্রীদের মধ্যে। কাশ্মীরের অশান্ত পরিবেশ থেকে বের হয়ে এসে যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের স্বপ্নে দেশের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিল তারা মাঝপথে আতঙ্ক নিয়েই ফের রক্তাক্ত কাশ্মীরে ফিরে যাচ্ছে। এমনকী যেসব ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে বিভিন্ন প্রাইভেট হস্টেল বা মেসে থাকছিল তাদেরকেও বহু বাড়ির মালিক রুম ছেড়ে যাওয়ার নিদান দিয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ধর্ষণের হুমকি দেওয়া পোস্টের বহু সমর্থনও লক্ষ করা যাচ্ছে। কাশ্মীর মানেই টেরোরিস্ট, এই মন্তব্য তাদের আইনত অধিকার বলে মনে করছে। যদিও এইসব পোস্টের নিন্দা জানিয়েছে অনেকে। তবে তাদের সংখ্যা অনেকটাই কম। তবে সকলেই অবাক হয়ে দেখছেন এই আপত্তিকর পোস্ট ডিলিট করা হয়নি। আর না কারো বিরুদ্ধে আইনগতভাবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বিজেপির আইটি সেলকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। এই আইটি সেল পহেলগাঁও-এর ঘটনার পর থেকে কাশ্মীর বিরোধী ও মুসলিম বিরোধী প্রপাগান্ডা চরমে নিয়ে যেতে চেয়েছে। ভুল তথ্য ও মিথ্যা খবর তুলে ধরা হচ্ছে মিডিয়ায়। মিডিয়ার বিদ্বেষ প্রচার বন্ধেও কোনও ব্যবস্থা এ পর্যন্ত নিতে পারেনি কেউ। ফলে বিদ্বেষ প্রচার চরমে তোলার সুযোগ নিচ্ছে উগ্রবাদীরা।