খোস আমদেদ মাহে রমযান

- আপডেট : ২ মার্চ ২০২৫, রবিবার
- / 41
আহমদ হাসান ইমরান
শুরু হয়েছে পবিত্র রমযান মাস। এই মাসটি দুনিয়ার মুসলিমরা কঠোর এক সাধনার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে। সমগ্র মাসব্যাপী দিন শুরুর আঁধার রাত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অভুক্ত থাকা, প্রবল তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে গেলেও এক ঢোকও পানি পান না করা, বৈধ যৌনতাকেও পরিহার করে চলা, সব সময় আল্লাহর ধ্যানে, তাঁর ইবাদতে মশগুল থাকা, তারাবীহর নামায ছাড়াও রাত্রিবেলা প্রভুর সামনে দণ্ডায়মান হয়ে সালাত আদায় করা, এসব কিছু অবশ্যই কঠিন মেহনতমূলক এক আরাধনা। আপনার দেহ, মন, আত্মাকে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন করা এবং মানসিক ও শারীরিকভাবে আল্লাহর আরাধনায় রত থাকা অবশ্যই কঠিন কাজ। তা সত্ত্বেও কিন্তু সারা মুসলিম বিশ্বে রমযানের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এক খুশির লহর বয়ে যায়। রমযান মাসের চাঁদ দেখা গেলেই মহল্লা মহল্লায়, গ্রামে গ্রামে শুরু হয় আল্লাহকে ধন্যবাদ দেওয়ার পালা। এলাকাগুলি সেজে ওঠে আলোর রঙিন রসনাইতে। শিশুরাই সবথেকে বেশি আনন্দিত হয় পবিত্র রমযান মাসের আগমনে। কেউই কিন্তু রমযান মাসে কঠিন সাধনার ব্রতকে ভয় পান না এবং রোযার আগমন বার্তার আনন্দই তাদের হৃদয়-মনে উচ্চোকিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ ছোট থেকে বড়, নারী থেকে পুরুষ মুসলিমরা রমযানের আগমনে বাঁধভাঙা আনন্দে শরীক হন। এ এক অপূর্ব দৃশ্য যার তুলনা মেলা ভার। সেই রমযান হাজির হয়েছে বাংলার সাড়ে তিন কোটি মুসলিমের দুয়ারে।
ঈমানদার মুসলিমরা রমযান মাসকেই আল্লাহর এক মহান নিয়ামত বলেই মনে করে। মুসিবত বলে ভাবে না। মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও সকলের প্রতি ইনসাফ করার চেষ্টা করে।
সকলেরই চেষ্টা থাকে, কী করে এই পবিত্র মাস থেকে ফায়দা হাসিল করা যায়। পথ চলা শুরু হয় আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের সাধনাতে।
রমযানে একটি বড় কথা হল, এই পবিত্র মাসেই নাযেল হয়েছিল আল কুরআন। আল কুরআন হচ্ছে হেদায়েত, রহমাত, নূর ও শেফা বা আরোগ্যস্বরূপ। তাই এই মাসে বেশি বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত ও অর্থ-সহ বুঝে পড়ার নির্দেশ রয়েছে। পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছিল বলেই এই মাসের মহত্ত্ব সবথেকে বেশি। পবিত্র কুরআনে আলোর উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। ওই আলোর উদাহরণ এমন যেন তাকের উপর একটি প্রদীপ রয়েছে। প্রদীপের বাইরে রয়েছে কাচের চিমনি। চিমনি হীরার মতো চকচক করছে। অথচ লোকদের ব্যবসা-বাণিজ্য, কেনাবেচা তাদেরকে আল্লাহর জিকির, নামায কায়েম ও জাকাত আদায়ের ব্যাপারে বিভ্রান্ত করতে পারে না। (সূরা নূর ৩৫:৩৭)
বুখারি ও মুসলিম শরীফের হাদিসে রয়েছে, ‘রমযান মাস এলে আকাশের দরজাগুলি খুলে দেওয়া হয় এবং রহমত বর্ষণ হতে থাকে। সৎ পথে চলা সকলের জন্য সহজ এবং উন্মুক্ত হয়ে যায়। শয়তানকে শিকল দ্বারা আবদ্ধ করা হয়। অন্যায় ও অসৎ তৎপরতা বিস্তারের সুযোগ অপেক্ষাকৃত কমতে থাকে।’
আর একটি হাদিসে রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রমযানে সম্পূর্ণ রোযা রাখবে তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। সবে কদরে যে ব্যক্তি কিয়াম করে রাত কাটিয়ে দেবে, তাদেরকেও ক্ষমা করে দেওয়া হবে শুধুমাত্র এই শর্তে যে, আল্লাহর সকল বাণী ও সকল ওয়াদাকে সে সত্য মনে করবে। নিজের সকল দায়িত্ব বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করবে এবং সর্বদা সতর্কতার সঙ্গে সে আত্মসমালোচনার কথা মনে রাখবে।’
আল্লাহ্তায়লা বলেন, যদি বান্দাহ তাঁর দিকে একহাত অগ্রসর হয় তাহলে আল্লাহ আপনার দিকে দু’হাত অগ্রসর হবেন। বান্দাহ যদি তাঁর দিকে হেঁটে অগ্রসর হয় তাহলে তিনি বান্দাহর দিকে দৌড়ে অগ্রসর হবেন। (মুসলিম)
তাই রমযান মাসে আমাদের এই মাসটির সম্পূর্ণ গুরুত্ব বুঝে আল্লাহ্র পথে অগ্রসর হতে হবে। আর তাহলেই আসবে আমাদের ইহজীবনে কল্যাণ ও পরকালে মুক্তি।