২৭ মার্চ ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘জশন-এ-আলবিদা’, ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠানে উর্দু বাক্যাংশ লেখায় অধ্যক্ষকে তলব

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৬ মার্চ ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 6

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ‘জশন-এ-আলবিদা’! দ্বাদশ শ্রণীর বিদায়ী কার্ডে  উর্দু  লিখে তদন্তের মুখে স্কুল অধ্যক্ষ। অকুস্থল রাজস্থানের  শাহাবাদ শহরে ।  বলা বাহুল্য, দেশজুড়ে ভাষা দ্বন্দ্ব শিখরে। এক দেশ, এক ভাষা! ২০২২ সালে অমিত শাহ নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটি হিন্দি ভাষাকে বাধ্যতামূলক করতে কেন্দ্রে সুপারিশ করেছিলেন। যেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে  দেশজুড়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি তামিলনাডুতে হিন্দি ভাষা বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। বাদ নেই বাংলাও। এবার ভাষা দ্বন্দ্বের রেশ ছড়িয়ে পড়ল রাজস্থানে। তবে ভিন্ন পন্থায়। বিদায়ী অনুষ্ঠানে মুসলিমদের ‘ভাষা’ উর্দু  কেন ব্যবহার করেছেন ওঁই অধ্যক্ষ?  এই প্রশ্নের জবাব জানতেই ওঁই অধ্যক্ষকে তলব করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর,  অধ্যক্ষের নাম বিকেশ কুমার। শাহাবাদ মহাত্মা গান্ধী রাজকীয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ তিনি। স্কুলে  ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দ্বাদশ শ্রেণীর বিদায়ী অনুষ্ঠানের ‘জশন-এ-আলবিদা লেখা একটি কার্ড ছড়িয়ে পড়তেই বিতর্ক শুরু হয়। মুসলিম বিদ্বেষ পোষণকারী একদল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্থানীয় বিধায়ক, জেলা কালেক্টর, ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রধান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৈন্দ লাল রায়গর বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি দল গঠন করেছেন। এবং কেন অনুষ্ঠানে উর্দু লেখা কার্ড বিলি হয়েছে তার জন্য রিপোর্ট জমা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও বিকেশ জানিয়েছেন, ওঁই  কার্ডটি প্রিন্ট হলেও সেটা বিলি হয়নি। নতুন একটা কার্ড সর্বত্রে বিলি হয়েছে। আর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিতেই অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়েছিল। এখন বিতর্ক শুরু হয়েছে।

তলবের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই এই বিষয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন উর্দু বিশেষজ্ঞ। সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে দেশীয় ভাষাগত ঐতিহ্যের উপর আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁরা জানান, উর্দু শুধু মুসলমানদের নয়, দেশের স্বাধীনতার ভাষা। ভারতের সাংস্কৃতিক কাঠামোর সঙ্গে গভীরভাবে মিশে থাকা একটি ভাষা। তবে স্বাধীনতা পূর্বে অভিজাত মুসলমানদের মধ্যে উর্দু ভাষার বহুল প্রচলন ছিল।

বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ডঃ শাহনওয়াজ আলম বলেন, উর্দু ভাষাকে জোরপূর্বক ধর্মীয় ভাষা হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ভাষাকে যেভাবে টার্গেট করা হচ্ছে তা  অত্যন্ত উদ্বেগজনক।  উর্দুকে ক্রমাগত এমনভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে যেন এটি বিদেশী বা সাম্প্রদায়িক ভাষা। উর্দু হিন্দি, তামিল বা বাংলার মতোই ভারতীয়। এটি হিন্দু এবং মুসলিম উভয়ের দ্বারাই লালিত হয়েছে। এর সাহিত্য ভারতের ভাগ করা সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের স্বাক্ষ্য দেয়।

প্রখ্যাত কবি ও লেখক জাভেদ আনোয়ার বলেন, বিদায়ী কার্ডে উর্দু লেখাটা বড় বিষয় নয়। ভাষাটি মুসলিমদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেই ঘটনাটি ঘটেছে। কিন্তু হাস্যকর বিষয় হল যে উর্দু ভাষা মুসলমানদের মতোই অমুসলিমদের দ্বারাও বিকশিত এবং সমৃদ্ধ হয়েছে।

 

 

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘জশন-এ-আলবিদা’, ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠানে উর্দু বাক্যাংশ লেখায় অধ্যক্ষকে তলব

আপডেট : ৬ মার্চ ২০২৫, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: ‘জশন-এ-আলবিদা’! দ্বাদশ শ্রণীর বিদায়ী কার্ডে  উর্দু  লিখে তদন্তের মুখে স্কুল অধ্যক্ষ। অকুস্থল রাজস্থানের  শাহাবাদ শহরে ।  বলা বাহুল্য, দেশজুড়ে ভাষা দ্বন্দ্ব শিখরে। এক দেশ, এক ভাষা! ২০২২ সালে অমিত শাহ নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটি হিন্দি ভাষাকে বাধ্যতামূলক করতে কেন্দ্রে সুপারিশ করেছিলেন। যেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে  দেশজুড়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি তামিলনাডুতে হিন্দি ভাষা বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। বাদ নেই বাংলাও। এবার ভাষা দ্বন্দ্বের রেশ ছড়িয়ে পড়ল রাজস্থানে। তবে ভিন্ন পন্থায়। বিদায়ী অনুষ্ঠানে মুসলিমদের ‘ভাষা’ উর্দু  কেন ব্যবহার করেছেন ওঁই অধ্যক্ষ?  এই প্রশ্নের জবাব জানতেই ওঁই অধ্যক্ষকে তলব করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর,  অধ্যক্ষের নাম বিকেশ কুমার। শাহাবাদ মহাত্মা গান্ধী রাজকীয় বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ তিনি। স্কুলে  ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দ্বাদশ শ্রেণীর বিদায়ী অনুষ্ঠানের ‘জশন-এ-আলবিদা লেখা একটি কার্ড ছড়িয়ে পড়তেই বিতর্ক শুরু হয়। মুসলিম বিদ্বেষ পোষণকারী একদল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্থানীয় বিধায়ক, জেলা কালেক্টর, ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রধান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৈন্দ লাল রায়গর বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি দল গঠন করেছেন। এবং কেন অনুষ্ঠানে উর্দু লেখা কার্ড বিলি হয়েছে তার জন্য রিপোর্ট জমা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও বিকেশ জানিয়েছেন, ওঁই  কার্ডটি প্রিন্ট হলেও সেটা বিলি হয়নি। নতুন একটা কার্ড সর্বত্রে বিলি হয়েছে। আর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিতেই অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়েছিল। এখন বিতর্ক শুরু হয়েছে।

তলবের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই এই বিষয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন উর্দু বিশেষজ্ঞ। সংশ্লিষ্ট ঘটনাকে দেশীয় ভাষাগত ঐতিহ্যের উপর আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁরা জানান, উর্দু শুধু মুসলমানদের নয়, দেশের স্বাধীনতার ভাষা। ভারতের সাংস্কৃতিক কাঠামোর সঙ্গে গভীরভাবে মিশে থাকা একটি ভাষা। তবে স্বাধীনতা পূর্বে অভিজাত মুসলমানদের মধ্যে উর্দু ভাষার বহুল প্রচলন ছিল।

বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ডঃ শাহনওয়াজ আলম বলেন, উর্দু ভাষাকে জোরপূর্বক ধর্মীয় ভাষা হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ভাষাকে যেভাবে টার্গেট করা হচ্ছে তা  অত্যন্ত উদ্বেগজনক।  উর্দুকে ক্রমাগত এমনভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে যেন এটি বিদেশী বা সাম্প্রদায়িক ভাষা। উর্দু হিন্দি, তামিল বা বাংলার মতোই ভারতীয়। এটি হিন্দু এবং মুসলিম উভয়ের দ্বারাই লালিত হয়েছে। এর সাহিত্য ভারতের ভাগ করা সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের স্বাক্ষ্য দেয়।

প্রখ্যাত কবি ও লেখক জাভেদ আনোয়ার বলেন, বিদায়ী কার্ডে উর্দু লেখাটা বড় বিষয় নয়। ভাষাটি মুসলিমদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেই ঘটনাটি ঘটেছে। কিন্তু হাস্যকর বিষয় হল যে উর্দু ভাষা মুসলমানদের মতোই অমুসলিমদের দ্বারাও বিকশিত এবং সমৃদ্ধ হয়েছে।