বিশ্বের সর্ববৃহৎ কুরআন শরীফ রাজস্থানে!

- আপডেট : ৮ মার্চ ২০২৫, শনিবার
- / 6
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: রাজস্থান। যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ছোঁয়া। এই রাজ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রাজপুতদের নানা শিল্প-স্থাপত্য। তবে কেবল শিল্প, স্থাপত্য, ধর্মীয় কিংবা ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের জন্যই বিখ্যাত নয় এই মরুরাজ্য। বরং ইসলামিক অধ্যয়ন ও সংস্কৃতির একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত রাজস্থানের টঙ্ক। বিশ্বের সব থেকে বড় কুরআন শরীফই রয়েছে রাজ্যের টঙ্ক জেলায়। সেখানে অবস্থিত মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আরবি-ফারসি গবেষণা ইনস্টিটিউটে সংরক্ষিত রয়েছে সুবিশাল এই ঐশী গ্রন্থটি। যা এই স্থানটিকে একটি অনন্য এবং আন্তর্জাতিক গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত করেছে। এই কুরআন শরীফের দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ৫ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৭ ফুট ৬ ইঞ্চি। পবিত্র এ গ্রন্থ লিখতে জার্মানি থেকে বিশেষ এক কালি নিয়ে আসা হয়েছিল।
আর দেশের অন্দরে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে এর কাগজ। এই কুরআন খুলতে কমপক্ষে ৮-১০ জন লোকের প্রয়োজন। দীর্ঘ ২ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর হাজি শের মুহাম্মদ খান এই কুরআনটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। ২০১৪ সাল থেকে টঙ্কের এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষিত আছে পবিত্র কুরআন শরীফটি। আকর্ষণীয় কারুকার্যে নির্মিত এই কুরআনটি দেখতে এখনও পর্যন্ত ১২ লক্ষেরও বেশি মানুষ সেস্থানে ঘুরতে গিয়েছেন। বলা বাহুল্য, পবিত্র কুরআন শরীফ মুসলিম তথা পুরো বিশ্বের কাছে এক বিস্ময়কর গ্রন্থ। কুরআন সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ। মহান আল্লাহ্ তায়ালা মানুষের পথনির্দেশ হিসেবে কুরআন নাজিল করেছেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্তহীন উৎস এই কুরআন। খোদ আল্লাহ্ মুমিনদের কুরআন নিয়ে গবেষণা করতে নানাভাবে উৎসাহিত করেছেন।
সম্প্রতি, ফ্রান্স থেকে ছয় সদস্যের একটি দল টঙ্কের ওই ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন। মূলত পবিত্র ওই কুরআন শরীফ দেখতেই তাঁরা সুদূর ফ্রাস থেকে মরুরাজ্যে এসেছেন। এদিন তাঁরা ইনস্টিটিউটের ঐতিহাসিক গ্রন্থ এবং গ্রন্থাগার পরিদর্শন করেন এবং এর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
টঙ্ক শুধু বিশ্বের বৃহত্তম কুরআন সংরক্ষিত করার জন্য নয়, এই জেলা হাফিজ গড় নামেও পরচিত। যে সকল মানুষের অর্থাৎ নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু ইত্যাদি পূর্ণাঙ্গ কুরআন মুখস্থ তাঁদের হাফিজ বলা হয়। হাফিজা এই শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ। টঙ্কে ৩০০০ এরও বেশি হাফিজ রয়েছে। তাই এই জেলাকে হাফিজ গড় নামেও পরচিতি লাভ করেছে। পবিত্র রমযান মাসে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে তাঁদের ডাক পড়ে। বিশেষ করে তারাবির নামায ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্য তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। টঙ্কে ৩০০ টিরও বেশি মসজিদ রয়েছে। ইসলামী শিক্ষার জন্য সারা দেশে বিখ্যাত ছিল এই জেলা। এমনকি উপসাগরীয় দেশগুলি থেকেও ছাত্ররা সেখানে পড়াশোনার জন্য আসত। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ আরবি-ফারসি গবেষণা ইনস্টিটিউট কেবল কুরআনই নয়, অন্যান্য ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গ্রন্থেরও এক ভান্ডার। এখানে আরবি-ফারসি ভাষায় লেখা রামায়ণ, মহাভারত এবং গীতার মতো দুর্লভ হাতে লেখা বইও সংরক্ষিত রয়েছে।
এছাড়াও, ইনস্টিটিউটে ক্যালিগ্রাফির অনেক অনন্য কাজ সংরক্ষিত আছে। যা ইসলামী শিল্প ও সংস্কৃতির এক চমৎকার উদাহরণ উপস্থাপন করে। টঙ্কের তৃতীয় নবাব মুহাম্মদ আলী খান দুর্লভ নানা গ্রন্থ সংগ্রহ করতে ভালোবাসতেন। এবং সেগুলো সংরক্ষণের জন্য কাজ করতেন। তাঁর অদম্য প্রচেষ্টার ফলে, উপরোল্লিখিত প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বের গবেষক এবং ইতিহাসবিদদের জন্য একটি প্রধান গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যদিও টঙ্কের এই ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানটি তার অনন্য ঐতিহ্য এবং বিরল গ্রন্থের জন্য বিশ্বখ্যাত। তবুও এখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে কর্মী নেই। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটি যাতে আরও এগিয়ে যেতে পারে এবং বিশ্বজুড়ে তার খ্যাতি অর্জন করতে পারে তার জন্য একাডেমিক কর্মী, অনুবাদক এবং অন্যান্য কর্মীদের প্রয়োজন। তার জন্য সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে সচেষ্ট হতে হবে বলেই দাবি কর্তৃপক্ষের।