২৫ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফের রণক্ষেত্র মণিপুর, পথ অবরোধ কুকিদের, আহত একাধিক

সুস্মিতা
  • আপডেট : ৮ মার্চ ২০২৫, শনিবার
  • / 3

ইম্ফল: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুর প্রশাসন ও নিরাপত্তা আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, ৮ মার্চ থেকে মণিপুরের সর্বত্র অবাধ ও মুক্ত যাতায়াত ব্যবস্থা করতে হবে। কেউ বাধা দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শাহর এই হুঁশিয়ারির পালটা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন কুকিরা। তাঁদের এলাকায় জোর করে মেইতেইদের ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে প্রবল প্রতিরোধ হবে। কুকি-জো’দের জন্য পৃথক প্রশাসনের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত কুকি এলাকা মেইতেইদের জন্য ‘মুক্তাঞ্চল’ করে দেওয়া হবে না। তাঁদের সেই হুংকার যে ফাঁকা আওয়াজ ছিল না তা আরও একবার স্পষ্ট হল শনিবার। দফায় দফায় নিরাপত্তা আধিকারিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হল কুকিদের। এখনও পর্যন্ত ১জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পদক্ষেপ ঘিরে ফের রণক্ষেত্রর চেহারা নিয়েছে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য। একাধিক জায়গায় মেইতেইদের ‘শান্তি-মিছিল’ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, কাংপোকপি জেলার বিভিন্ন প্রান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে কুকি-জো সম্প্রদায়ের সদস্যদের সংঘর্ষের পর অন্তত একজন নিহত এবং ২৭ জন আহত হয়েছে বলে খবর। আহতদের মধ্যে মহিলারাও রয়েছে। নিহতের নাম লালগৌথাং সিংসিট (৩০)। কেইথেলমানবিতে সংঘর্ষের সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। গামগিফাই, মটবুং এবং কেইথেলম্যানবে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ২৭জন আহত হয়েছে। তাদের স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
কুকি-অধ্যুষিত জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৮ মার্চ থেকে রাজ্য জুড়ে অবাধ চলাচলের যে নির্দেশ দিয়েছিলেন কুকি-জো’র তরফে তার বিরোধিতা করাকে কেন্দ্র করে অশান্তির সূত্রপাত। কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে পরিবহণ ব্যবস্থা চালু হলে তার বিরোধিতা করে কুকিরা। বিক্ষোভ দেখাতে থাকে তারা। ফলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি আরও তপ্ত হয়ে ওঠে।
পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় যখন বিক্ষোভকারীরা একাধিক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ইম্ফল থেকে সেনাপতি জেলায় যাওয়া একটি রাষ্ট্রীয় পরিবহণ বাসে হামলা চালায়। বিক্ষোভকারীরাও জাতীয় সড়ক-২ (ইম্ফল-ডিমাপুর হাইওয়ে) অবরোধ করে। সরকারি যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায়।
প্রশাসনের দাবি, স্থানীয়রা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশ অমান্য করার কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কারণ, শনিবার অর্থাৎ ৮ মার্চ থেকে কুকি এবং মেইতেই এলাকা সহ মণিপুর জুড়ে সমস্ত যানবাহনের অবাধ চলাচলের কথা বলা হয়েছিল। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিলেন মেইতেইরা। তাঁরা ‘শান্তি মিছিল’ করার ডাক দিয়েছিলেন। কুকিরা পালটা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তাঁদের এলাকায় মেইতেইদের এই অবাধ প্রবেশ বরদাশ্ত করবেন না। এদিন কানপোকপি জেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন কারফিউ জারি করে। গামগিফাই, মটবুং এবং কেইথেলম্যানবে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় অন্তত ২৭ জন বিক্ষোভকারী বিভিন্ন ধরনের আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: বিশ্বের সর্ববৃহৎ কুরআন শরীফ রাজস্থানে! 

এদিকে, শাহর নির্দেশ মতো এদিন থেকে বাস পরিষেবা চালু হলে কুকি অধ্যুষিত এলাকায় বাস আটকানো হয়। সকাল ১০টা নাগাদ চূড়াচন্দ্রপুর থেকে সেনাপতি জেলার উদ্দেশ্যে বাস ছাড়ে। অভিযোগ, গামগিফাই এলাকায় একদল জনতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণের ওই বাসে হামলা চালায়। পাথর নিক্ষেপ করা হয়। জবাবে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য। পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ১১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তারমধ্যে আইইডি, গ্রেনেডের মতো অস্ত্রও রয়েছে। রাজ্যের কয়েকটি নিষিদ্ধ সংগঠনের সাতজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পূথক অভিযানে চারটি নিষিদ্ধ সংগঠনের সাত সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।
কুকি-জো কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানায়। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার পুরোপুরি ওয়াকিবহাল ছিল এই ধরনের অবাধ চলাচলের মতো সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হলে সহিংসতা ঘটনা ঘটতে পারে। তারপরও সরকার এই ধরনের পদক্ষেপই করেছে। যে এলাকায় কুকি-জো উপজাতিদের প্রভাব রয়েছে সেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে। কুকি-জো অধ্যুষিত অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য একটি রাজনৈতিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সরকারের ‘মুক্ত পরিবহণ’ উদ্যোগের কঠোরভাবে বিরোধিতা করা হবে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আবার মণিপুরের রাজ্যপালকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অধীনে কুকি-জো অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে পৃথক প্রশাসনের যে দাবি তোলা হচ্ছে তা কোনওভাবেই মানা সম্ভব নয়। সবমিলিয়ে মণিপুরের পরিস্থিতি ফের তপ্ত হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন: ‘মহিলা সমৃদ্ধি যোজনা’য় মাথাপিছু ২,৫০০ টাকার ঘোষণা, তবে… ?

টেংনুপাল এবং চান্দেল এই দুই জেলার কুকি অধ্যুষিত এলাকার স্বেচ্ছাসেবকদের অফিস ইস্টার্ন জোনের পক্ষ থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাদের এলাকায় জোর করে প্রবেশের চেষ্টা হলে প্রতিরোধ জোরদার হবে। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, কুকি-জো জনগণের জন্য একটি আইনসভা সহ একটি পৃথক প্রশাসন বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আগে কুকি-জো অঞ্চলে কোনও অবাধ চলাচল বরদাশ্ত করা হবে না। এক কুকি স্বেচ্ছাসেবকের কথায়, ‘আমরা আমাদের জনগণ, আমাদের ভূমি এবং আমাদের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য আমাদের অঙ্গীকারে দৃঢ় রয়েছি। আমাদের অধিকার লঙ্ঘন বা জোরপূর্বক আমাদের এলাকায় প্রবেশের যে কোনও প্রচেষ্টার কঠোর প্রতিরোধের মাধ্যমে মোকাবিলা করা হবে।’ এক কুকি গ্রাম স্বেচ্ছাসেবক জানান, ‘আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে অবিরাম অন্যায়, অমানবিক নৃশংসতা এবং নিয়ম করে অত্যাচার চলছে। যারা কুকি-জো জনগণকে নির্যাতন করেছে,যারা নিরপরাধদের জীবন নিয়েছে, যারা আমাদের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করে চলেছে তাদের আমাদের জমিতে অবাধে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। আমাদের আলাদা প্রশাসনের দাবি শুধু রাজনৈতিক আকাঙ্খা নয়, আমাদের বেঁচে থাকা, নিরাপত্তা ও মর্যাদার প্রয়োজনে। একটি ন্যায্য এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যারা আমাদের নিপীড়ন করেছে তাদের আমরা আমাদের অঞ্চলে অবাধে চলাচল করতে দেব না। একটি পৃথক প্রশাসন বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আগে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা সরকারের সাহায্য নিয়ে অপরাধীদের সাথে আমাদের পুনর্মিলনের চেষ্টা করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থাকে গুরুতর পরিণতির মুখোমুখি হবে। কুকিদের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান করে এমন একটি রেজোলিউশন না হওয়া পর্যন্ত কুকি-জো অঞ্চলে কোনও অবাধ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ফের রণক্ষেত্র মণিপুর, পথ অবরোধ কুকিদের, আহত একাধিক

আপডেট : ৮ মার্চ ২০২৫, শনিবার

ইম্ফল: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুর প্রশাসন ও নিরাপত্তা আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, ৮ মার্চ থেকে মণিপুরের সর্বত্র অবাধ ও মুক্ত যাতায়াত ব্যবস্থা করতে হবে। কেউ বাধা দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শাহর এই হুঁশিয়ারির পালটা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন কুকিরা। তাঁদের এলাকায় জোর করে মেইতেইদের ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে প্রবল প্রতিরোধ হবে। কুকি-জো’দের জন্য পৃথক প্রশাসনের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত কুকি এলাকা মেইতেইদের জন্য ‘মুক্তাঞ্চল’ করে দেওয়া হবে না। তাঁদের সেই হুংকার যে ফাঁকা আওয়াজ ছিল না তা আরও একবার স্পষ্ট হল শনিবার। দফায় দফায় নিরাপত্তা আধিকারিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হল কুকিদের। এখনও পর্যন্ত ১জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পদক্ষেপ ঘিরে ফের রণক্ষেত্রর চেহারা নিয়েছে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য। একাধিক জায়গায় মেইতেইদের ‘শান্তি-মিছিল’ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, কাংপোকপি জেলার বিভিন্ন প্রান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে কুকি-জো সম্প্রদায়ের সদস্যদের সংঘর্ষের পর অন্তত একজন নিহত এবং ২৭ জন আহত হয়েছে বলে খবর। আহতদের মধ্যে মহিলারাও রয়েছে। নিহতের নাম লালগৌথাং সিংসিট (৩০)। কেইথেলমানবিতে সংঘর্ষের সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। গামগিফাই, মটবুং এবং কেইথেলম্যানবে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় ২৭জন আহত হয়েছে। তাদের স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
কুকি-অধ্যুষিত জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৮ মার্চ থেকে রাজ্য জুড়ে অবাধ চলাচলের যে নির্দেশ দিয়েছিলেন কুকি-জো’র তরফে তার বিরোধিতা করাকে কেন্দ্র করে অশান্তির সূত্রপাত। কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে পরিবহণ ব্যবস্থা চালু হলে তার বিরোধিতা করে কুকিরা। বিক্ষোভ দেখাতে থাকে তারা। ফলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি আরও তপ্ত হয়ে ওঠে।
পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় যখন বিক্ষোভকারীরা একাধিক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ইম্ফল থেকে সেনাপতি জেলায় যাওয়া একটি রাষ্ট্রীয় পরিবহণ বাসে হামলা চালায়। বিক্ষোভকারীরাও জাতীয় সড়ক-২ (ইম্ফল-ডিমাপুর হাইওয়ে) অবরোধ করে। সরকারি যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায়।
প্রশাসনের দাবি, স্থানীয়রা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশ অমান্য করার কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কারণ, শনিবার অর্থাৎ ৮ মার্চ থেকে কুকি এবং মেইতেই এলাকা সহ মণিপুর জুড়ে সমস্ত যানবাহনের অবাধ চলাচলের কথা বলা হয়েছিল। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিলেন মেইতেইরা। তাঁরা ‘শান্তি মিছিল’ করার ডাক দিয়েছিলেন। কুকিরা পালটা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তাঁদের এলাকায় মেইতেইদের এই অবাধ প্রবেশ বরদাশ্ত করবেন না। এদিন কানপোকপি জেলায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন কারফিউ জারি করে। গামগিফাই, মটবুং এবং কেইথেলম্যানবে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় অন্তত ২৭ জন বিক্ষোভকারী বিভিন্ন ধরনের আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: বিশ্বের সর্ববৃহৎ কুরআন শরীফ রাজস্থানে! 

এদিকে, শাহর নির্দেশ মতো এদিন থেকে বাস পরিষেবা চালু হলে কুকি অধ্যুষিত এলাকায় বাস আটকানো হয়। সকাল ১০টা নাগাদ চূড়াচন্দ্রপুর থেকে সেনাপতি জেলার উদ্দেশ্যে বাস ছাড়ে। অভিযোগ, গামগিফাই এলাকায় একদল জনতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণের ওই বাসে হামলা চালায়। পাথর নিক্ষেপ করা হয়। জবাবে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য। পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ১১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তারমধ্যে আইইডি, গ্রেনেডের মতো অস্ত্রও রয়েছে। রাজ্যের কয়েকটি নিষিদ্ধ সংগঠনের সাতজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পূথক অভিযানে চারটি নিষিদ্ধ সংগঠনের সাত সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ।
কুকি-জো কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানায়। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকার পুরোপুরি ওয়াকিবহাল ছিল এই ধরনের অবাধ চলাচলের মতো সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হলে সহিংসতা ঘটনা ঘটতে পারে। তারপরও সরকার এই ধরনের পদক্ষেপই করেছে। যে এলাকায় কুকি-জো উপজাতিদের প্রভাব রয়েছে সেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে। কুকি-জো অধ্যুষিত অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য একটি রাজনৈতিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সরকারের ‘মুক্ত পরিবহণ’ উদ্যোগের কঠোরভাবে বিরোধিতা করা হবে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আবার মণিপুরের রাজ্যপালকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অধীনে কুকি-জো অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে পৃথক প্রশাসনের যে দাবি তোলা হচ্ছে তা কোনওভাবেই মানা সম্ভব নয়। সবমিলিয়ে মণিপুরের পরিস্থিতি ফের তপ্ত হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন: ‘মহিলা সমৃদ্ধি যোজনা’য় মাথাপিছু ২,৫০০ টাকার ঘোষণা, তবে… ?

টেংনুপাল এবং চান্দেল এই দুই জেলার কুকি অধ্যুষিত এলাকার স্বেচ্ছাসেবকদের অফিস ইস্টার্ন জোনের পক্ষ থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাদের এলাকায় জোর করে প্রবেশের চেষ্টা হলে প্রতিরোধ জোরদার হবে। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, কুকি-জো জনগণের জন্য একটি আইনসভা সহ একটি পৃথক প্রশাসন বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আগে কুকি-জো অঞ্চলে কোনও অবাধ চলাচল বরদাশ্ত করা হবে না। এক কুকি স্বেচ্ছাসেবকের কথায়, ‘আমরা আমাদের জনগণ, আমাদের ভূমি এবং আমাদের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য আমাদের অঙ্গীকারে দৃঢ় রয়েছি। আমাদের অধিকার লঙ্ঘন বা জোরপূর্বক আমাদের এলাকায় প্রবেশের যে কোনও প্রচেষ্টার কঠোর প্রতিরোধের মাধ্যমে মোকাবিলা করা হবে।’ এক কুকি গ্রাম স্বেচ্ছাসেবক জানান, ‘আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে অবিরাম অন্যায়, অমানবিক নৃশংসতা এবং নিয়ম করে অত্যাচার চলছে। যারা কুকি-জো জনগণকে নির্যাতন করেছে,যারা নিরপরাধদের জীবন নিয়েছে, যারা আমাদের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করে চলেছে তাদের আমাদের জমিতে অবাধে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। আমাদের আলাদা প্রশাসনের দাবি শুধু রাজনৈতিক আকাঙ্খা নয়, আমাদের বেঁচে থাকা, নিরাপত্তা ও মর্যাদার প্রয়োজনে। একটি ন্যায্য এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যারা আমাদের নিপীড়ন করেছে তাদের আমরা আমাদের অঞ্চলে অবাধে চলাচল করতে দেব না। একটি পৃথক প্রশাসন বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আগে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা সরকারের সাহায্য নিয়ে অপরাধীদের সাথে আমাদের পুনর্মিলনের চেষ্টা করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থাকে গুরুতর পরিণতির মুখোমুখি হবে। কুকিদের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান করে এমন একটি রেজোলিউশন না হওয়া পর্যন্ত কুকি-জো অঞ্চলে কোনও অবাধ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না।